এবার স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা করছে কানাডা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরেই এই স্বীকৃতি দেয়া হতে পারে। এ নিয়ে বিগত কয়েক দিনে উন্নত সাত দেশের জোট জি-৭-এর তিন সদস্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলল। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা দেয়ায় এগিয়ে আসলো দেশটি। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
৩০ জুলাই বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্ক কার্নি বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় মানুষের দুর্দশা অসহনীয়। দ্রুত এর অবনতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কানাডার। তবে এই স্বীকৃতি কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে বলে উল্লেখ করেন কানাডার প্রেসিডেন্ট। সেগুলো হলো ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে নিজেদের শাসনব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কার আনার, হামাসকে বাদ দিয়ে ২০২৬ সালে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করার এবং এ ভূখণ্ডকে নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে কয়েক দিন আগে জানিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। পরে ইসরায়েল কিছু শর্ত না মানলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৫০টি দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ঘোষণার পর থেকেই মার্ক কার্নির ওপর চাপ বাড়ছিল। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার তাঁকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি লেখেন কানাডার প্রায় ২০০ জন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক। তাতে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড কানাডার স্বার্থ ও মূল্যবোধকে ক্ষুন্ন করেছে।
স্থানীয় সময় বুধবার এক বিবৃতিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, ইসরায়েল গাজায় চলমান আগ্রাসন বন্ধ না করলে এম পদক্ষেপ নেবে দেশটি। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়া নিশ্চিত করাই লক্ষ্য বলে জানান কার্নি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও অঙ্গীকার অনুযায়ী সংস্কার দেখতে চায় কানাডা। গত সপ্তাহেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পরিকল্পনা জানায় ইউরোপের পরাশক্তি ফ্রান্স। কয়েকদিনের মাথায় মঙ্গলবার একই পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাজ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে নতুন গতি দিতে পারে, কিন্তু তা ইসরাইলি সরকারের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কে টানাপোড়েনও তৈরি করবে। গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন কমছে, আর কানাডার এই সিদ্ধান্ত সেই প্রবণতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এটি কি শান্তির পথ প্রশস্ত করবে, নাকি সংঘাত আরও জটিল করবে-সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।